দশমিনা (পটুয়াখালী) থেকে সঞ্জয় ব্যানাজী
তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে শত শত জেলের জালে মিলছে না আশানুরূপ মাছ। সারাদিন ও রাতে নদীতে জাল ফেলে প্রায় খালি হাতেই অনেক জেলে নদীতীরে ফিরে আসছেন। এতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছশূন্য হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার হাট-বাজারগুলো।
অপরদিকে জেলে পরিবারগুলো ঋণের কিস্তি আর দাদনের দায়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
দশমিনা উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারে গত বছর এই দিনে দিন-রাত ইলিশ বেচাকেনায় ব্যস্ত থাকতেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা-সেখানে এখন শূন্যতা বিরাজ করছে। ইলিশের উৎপাদনের লক্ষ্যে নদীতে প্রায় দুই মাসের সবধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘ দিন পার হলেও জেলেদের জালে মিলছে না কোনো ইলিশ। মাছ শিকার না হওয়ার ফলে মাছের আকাল বলে দাবি করছেন জেলেরা। মাছ না পাওয়ায় হাজার হাজার জেলে পরিবারের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। ইলিশের আমদানি না হওয়ায় অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলে ও আড়তদাররা।
মাছ বিক্রির ঘাটসহ বিভিন্ন হাটে ঘুরে দেখা যায়, ঘাটে তেমন মাছ নেই বললেই চলে। জেলে ও আড়তদাররা অলস সময় পার করছেন।
জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে অনেক অনেক দিন; কিন্তু নদীতে মাছ নেই। সারা দিন নদীতে জাল ফেলে এবং মাছ শিকার করলে দুই থেকে চারটা মাছ পাওয়া যায়। তা দিয়ে ইঞ্জিন-চালিত নৌকার তেলের খরচও জোগাড় করা যায় না। আমরা খুব সমস্যায় আছি পরিবার পরিজন নিয়ে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ১০ হাজার ১৭০ জন জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জেলেকে ২০ কেজি হারে সরকারি চাল দেয়া হয়। এ দিকে জেলেদেরকে দাদন দিয়ে এখন বেকাদায় পড়ছেন দাদন ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা না পড়ায় তারা মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না।
স্থানীয় জেলেরা বলেন, আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। আমাদের সংসার চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে পরিবারপরিজন, ছেলেমেয়েদের নিয়ে কিভাবে চলব সে চিন্তায় আছি।
এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া লঞ্চঘাট এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মিরাজ খান বলেন, তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে কোনো মাছ নেই। জেলেরাসহ আমরা মৎস্য ব্যবসায়ীরা খুব কষ্টে আছি।
এ বিষয়ে দশমিনা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহাবুব আলম তালুকদার জানান, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপর ভারসাম্যহীন আঘাতের এবং তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে গভীরতা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে নদীতে ইলিশ মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। উপজেলার নদীসীমার আট-দশটি স্পট আছে; সেগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে গেছে। এই স্পটগুলো ড্রেজিং করলে আবার নদীতে ইলিশের দেখা মিলতে পারে বলে এই কর্মকর্তা মনে করছেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
